সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনার দুই মাস পর ধর্ষকদের ডিএনএ রিপোর্ট তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এসে পৌঁছেছে। ডিএনএ রিপোর্টে ধর্ষণে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি পাওয়া গেছে। তবে গ্রেপ্তার আট আসামির ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হলেও তাদের মধ্যে কতজনের নমুনায় সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।
গতকাল রোববার রাতে ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের। তিনি জানান, ডিএনএ রিপোর্ট হাতে আসায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই চার্জশিট দেওয়া হবে এবং বিস্তারিত তথ্য সকলকে জানানো হবে।
এর আগে চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণকাণ্ডের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও চার্জশিট জমা না পড়ায় সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ। সে সময় ডিএনএ রিপোর্টের কারণেই চার্জশিট দিতে পারেনি বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
তার আগে গত ১ অক্টোবর ও ৩ অক্টোবর দুদিনে এ মামলায় গ্রেপ্তার আটজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের পর পাঠানো হয় ঢাকার ল্যাবে। সেখান থেকে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট প্রথমে আদালতে এসে পৌঁছায়। পরবর্তী সময়ে এ রিপোর্ট তদন্ত কর্মকর্তার হাতে আসে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিলেট এমসি কলেজের হোস্টেলে ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এ ঘটনায় ছয়জনকে আসামি করে এসএমপির শাহপরাণ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। নির্যাতিত ওই তরুণীর স্বামী বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আসামিরা হলেন- সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব ও জেলা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার আটজন কারাগারে আছে। গ্রেপ্তার সকলকেই পাঁচদিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে তাদেরকে আদালতে হাজির করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
অপরদিকে, গণধর্ষণের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ইতোমধ্যে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও মহি উদ্দিন শামিম গঠিত বেঞ্চে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের হলরুমে গত ৪ অক্টোবর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত এ ঘটনায় গণশুনানি হয়। পরে কমিটির সদস্যরা এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের গণধর্ষণের ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ সাক্ষীদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে গত ১৬ অক্টোবর ১৭৬ পৃষ্টার একটি তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্ট বেঞ্চে জমা দেওয়া হয়েছে। যার শুনানি হয় ২০ অক্টোবর। এদিন শুনানি শেষে প্রতিবেদনটি গ্রহণ করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এদিকে, গণধর্ষণের এ ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে ২৬ অক্টোবর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও কলেজের অধ্যক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দোহাই দিয়ে কলেজ কমিটির এ প্রতিবেদনটি সিলগালা করে রাখেন।
গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চার আসামির ছাত্রত্ব এবং সার্টিফিকেট বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি তাদের স্থায়ীভাবে এমসি কলেজ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন- সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল হাসান।
এর আগে ঘটনার কয়েকদিন পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গণধর্ষণের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি এমসি কলেজে তদন্ত করতে আসে। তদন্ত শেষে তারা তাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন।
Leave a Reply